বাংলাদেশ ক্রিকেটের পুরনো শত্রু জিম্বাবুয়ে। আসলে 'শত্রু' না বলে মিত্র বলাই ভালো। বাংলাদেশ ক্রিকেট যখন আঁতুড়ঘরে তখন যেসব ক্রিকেট খেলুড়ে দল টাইগারদের চলতে সাহায্য করেছে তাদের মধ্যে সবার আগে আসবে জিম্বাবুয়ের নাম। বাংলাদেশ যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবে পা রেখেছে জিম্বাবুয়ের তখন ক্রিকেটবিশ্বে রীতিমতো ছড়ি ঘোরাচ্ছে।
১৯৯৭-২০০২- এই সময়কালকে বলা হয় জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের স্বর্ণযুগ। যে সময়টায় জিম্বাবুয়েকে দেখা হত অত্যন্ত সমীহের চোখে, গণ্য করা হত বিশ্ব ক্রিকেটের ‘উঠতি পরাশক্তি’ হিসেবে। অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল, মারে গুডউইন, স্টুয়ার্ট কার্লাইল, ফ্লাওয়ার ব্রাদার্সের মত বিশ্বমানের ব্যাটসম্যান; হিথ স্ট্রিক, পল স্ট্র্যাং, হেনরি ওলোঙ্গার মত ‘উইকেটশিকারি’ বোলার আর নিল জনসন, গাই হুইটাল, অ্যান্ডি ব্লিগনটের মত দুর্দান্ত অলরাউন্ডারদের নিয়ে গড়া দলটা তখনকার ক্রিকেটের পরাশক্তিগুলোকে বাধ্য করেছিলো তাদের সমীহের চোখে দেখতে। জিম্বাবুয়ের স্বর্ণালী যুগের একেবারে শেষ সময়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন এক তরুণ- হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। তিনি আসলেন আর জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে ঘটে গেলো মহা বিপর্যয়। এক সঙ্গে তারকা ক্রিকেটারদের পদত্যাগে দুর্বল হয়ে পড়ে জিম্বাবুয়ে দল। এমনকি টেস্ট ক্রিকেট থেকে সাময়িক নির্বাসনেও যেতে হয় তাদের।
ভঙ্গুর জিম্বাবুয়ের হয়ে যে কজন ক্রিকেটার বুক চিতিয়ে লড়াই করে গেছেন তাদের মধ্যে সবার আগে আসার কথা মাসাকাদজার নাম। একটা সময় যখন খেলা চলাকালীন ইলেকট্রিসিটি না থাকতো, বন্ধ হয়ে যেতো টিভিটা; তখন রেডিওতে বাংলাদেশি ধারাভাস্যকারদের মুখে হ্যামিল্টন মাসাকাদজার নামটা এত বার, এত ঢঙে উচ্চারিত হয়েছে যে বাংলাদেশি ক্রিকেট প্রেমীদের হৃদয়ে গেঁথে গেছে নামটি। বাংলাদেশের মাটিতেই ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি খেলে ফেললেন মাসাকাদজা। ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেদের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েই বিদায় নিলেন তিনি।
তাকে আর দেখা যাবে না বাইজ গজের লাল-সাদা বলে বাউন্ডারি কিংবা ওভার বাউন্ডারি মারতে। চার কিংবা ছয়ে গ্যালারিতে আর ঝড় তুলবেন না। ক্রিকেটের দুই ফরম্যাট থেকে আগে বিদায় নিলেও এবার ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংষ্করণ টি-টোয়েন্টিকে বিদায় জানালেন জিম্বাবুয়ে দলের এ অলরাউন্ডার।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে আফগানদের বিপক্ষে ১৫৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা বেশ ভালই করেছিলেন হ্যামিল্টন। টি-টোয়েন্টিতে তুলে নিয়েছেন জীবনের ১১তম অর্ধশতক। এদিন ৪২ বলে ৭১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। এদিন সতীর্থরা তাকে খালি হাতে ফিরতে দিলেন না। এনে দিলেন দারুণ জয়। ক্রিকেট দেবীর করুণাও ছিলো মাসাকাদজার ওপর। তার ব্যাটে ভর করেছে জিতেছে দল।
ম্যাচ শুরুর আগে জিম্বাবুইয়ান এ ক্রিকেটার জানিয়ে দিয়েছিলেন জীবনের শেষ ম্যাচ খেলতে নামছেন তিনি। তার বিদায়ি এই আয়োজনে এদিন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দর্শকরা দাঁড়িয়ে তাকে বিদায় জানান। পাশাপাশি নিজের সতীর্থ খেলোয়াড়রা ব্যাট উঁচু করে সম্মান প্রদর্শন করার পাশাপাশি আফগান ক্রিকেটারও তাকে বিদায় জানায়।
ম্যাচ শুরুতে হ্যামিলটন মাসাকাদজা বলেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জীবনের শেষ ইনিংসটা খেলে ফেললাম। তবে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটকে মিস করব।
আফসোস নিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন ফরম্যাট থেকে আজ টি-টোয়েন্টির মাধ্যমে বিদায় হচ্ছি। হ্যামিলটন মাসাকাদজা, অনেক খেলোয়াড় আফসোস নিয়ে সব ফরম্যাট থেকে ফরম্যাটকে বিদায় বলেছে। আমারও কিছু আফসোস আছে। তবে আমি যা অর্জন করেছি তাতে অনেক খুশি।
লাল-হলুদের জার্সি পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্যুতি ছড়িয়েছেন তিনি। তিন ফরম্যাটেই ছিলেন দুর্দান্ত। টেস্টে ৩৮ ম্যাচে ৭৬ ইনিংস খেলে ৪৪.৩৭ গড়ে ২২২২ রান করেন। এরমধ্যে ৮টি অর্ধশতক ও ৫টি শতক আছে। টেস্টে তার সর্বোচ্চ ১৫৮ রান। ২০৯ ওয়ানডেতে খেলেছেন ২০৮ ইনিংস। ২৭ দশমিক ৭৪ গড়ে রান করেছেন ৭৭২৮, অর্ধশতক রয়েছে ৩৪টি, শতক ৫টি। সর্বোচ্চ সংগ্রহ ১৭৮ রান। ক্রিকেটের স্বপ্ল ওভার টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ৬৪টি, রান করেছেন ১১৪.৬২ গড়ে ১৩৩৪, অর্ধশতক রয়েছে ৯টি, শতক নেই। সর্বোচ্চ সংগ্রহ ৯৩ রান।
৩৬ বছর বয়সী এ অলরাউন্ডারের টেস্ট অভিষেক হয় ২৭ জুলাই ২০০১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এরপর একই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানতে অভিষেক হয়। ১২ নভেম্বর ২০১৪ বনাম বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট খেলে টেস্ট থেকে বিদায় নেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সালে ওয়ানডে থেকে বিদায় নেন তিনি। সবশেষ তিনি টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায় নিলেন আজ।