বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের খেলা শেষ করে আটটি দল কোয়ার্টার ফাইনালে গেছে। কোন দল বিশ্ব ফুটবলের শিরোপা অর্জন করবে তা নিয়ে সর্বত্রই চলছে জল্পনা-কল্পনা। চলতি বিশ্বকাপ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে বাংলাদেশ খেলার সুযোগ না পেলেও সারা দেশের মানুষ বিশ্বকাপ উন্মাদনায় মেতে উঠেছে। সারা দেশে হাট-বাজার, চা দোকান, মুদি দোকান, এমনকি ক্ষেতে-খামারেও বিশ্বকাপ ফুটবলের আলোচনা চলছে। নিজ নিজ প্রিয় দলের জয়-পরাজয় নিয়ে গভীর আগ্রহ, উত্তেজনা, তর্ক-বিতর্ক চলছে। সারা দেশেই ছোট, বড় বিভিন্ন আকারের ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাসহ বিভিন্ন দেশের পতাকা উড়ছে, রাতভর ছোট ও বড় পর্দায় খেলা দেখার আয়োজন করা হচ্ছে।
একসময় বাংলাদেশের সর্বত্রই ফুটবল ছিল শিশু, কিশোর ও তরুণদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় খেলা। শুধু চামড়ার ফুটবলই নয়; রাবারের বল, এমনকি গ্রামের শিশু-কিশোররা কাঁচা বাতাবি লেবু রোদে শুকিয়ে নরম করে তা দিয়েও মাঠে মাঠে ফুটবল খেলেছে। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) গঠিত হয় এবং ১৯৭৪ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা ফিফার সদস্যপদ লাভ করে। তখন আবাহনী, মোহামেডান, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, রহমতগঞ্জ, ওয়ারীসহ বেশ কয়েকটি ফুটবল দল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। দলগুলোর খেলা দেখার জন্য হাজার হাজার মানুষ স্টেডিয়ামে যেত, আর সারা দেশের মানুষ রেডিওতে খেলার ধারাবিবরণী শুনে আনন্দে উত্ফুল্ল হয়ে উঠত। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ প্রথম বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, দিন দিন দেশের খেলার মাঠগুলো যেমন হারিয়ে যাচ্ছে, একই সঙ্গে এই জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ খেলাটিও কর্তাব্যক্তিদের অবহেলার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে। ফুটবলের প্রতি দেশের মানুষের আগ্রহ ও ভালোবাসা থাকলেও একে ফিরিয়ে আনার বা আগের মতো জনপ্রিয় করে তোলার তেমন উদ্যোগ দেখা যায় না। দেশের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ থাকলেও শিক্ষকদের কোচিং আর পরীক্ষার যন্ত্রণায় শিক্ষার্থীরা শুধু ফুটবলই নয়, কোনো খেলায়ই অংশ নিতে পারছে না। তারা বাড়িতে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে নানা ধরনের অপসংস্কৃতিতে আসক্ত হচ্ছে।
শিশু, কিশোর ও তরুণদের আগ্রহ কাজে লাগিয়ে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ফুটবল খেলা বাধ্যতামূলক করা উচিত। উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলার প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিবছর জাতীয়ভাবে ফুটবল খেলার আয়োজন করতে হবে এবং সব পর্যায়ে খেলোয়াড়দের পুরস্কারের ব্যবস্থাও করতে হবে। বিদেশি খেলোয়াড়দের অন্তর্ভুক্ত করে সারা দেশে ফুটবল খেলার আয়োজন করতে হবে। শিশু, কিশোর ও তরুণদের মধ্যে ফুটবল খেলাকে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হলে দেশের মানুষ আবারও ফুটবলকে সাদরে গ্রহণ করবে। এর ফলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার সঙ্গে বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। সারা দেশে সুস্থ বিনোদনের পরিবেশও সৃষ্টি হবে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আমরা আশা করি, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশও বিশ্বকাপ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে।
বিপ্লব বিশ্বাস
ফরিদপুর।